যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গতকাল রোববার বৈশাখী মেলার আয়োজন করে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। পূর্ব লন্ডনের সুবিশাল ভিক্টোরিয়া পার্কে আয়োজন করা হয় এই বৈশাখী মেলার। তবে ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে খানিকটা দূরে বেথনাল গ্রিন পাতাল রেল স্টেশন থেকেই চোখে পড়ে এই মেলা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাড়ি, কামিজ আর পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে বাংলাদেশিরা ছুটছেন তারা মেলা প্রাঙ্গণের দিকে। পার্কের কাছে পৌঁছাতেই কানে আসে বাংলা গানের সূর। ভিক্টোরিয়া পার্ক যেন লোকে লোকারণ্য। সুবিশাল পার্কে গোল করে বসানো সারি সারি স্টল। ঝালমুড়ি, চানাচুর, ফুচকা-চটপটি ও বিরিয়ানিসহ স্টলগুলোতে নানা বাঙালি খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিলেতের বাংলাদেশিরা।
মেলা প্রাঙ্গণে বসে চটপটি খাচ্ছিলেন বাংলাদেশি ফারুক। তিনি বললেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলা উপভোগ করতে এসেছেন সেই পোর্টসমাউথ থেকে। নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এক বড় সুযোগ এই মেলা। বিদেশ বিভুঁইয়ে আপন সংস্কৃতিকে ধারণ করে একটা দিন কাটানো যায় এই মেলায়।
বার্মিংহাম থেকে দলবেঁধে এসেছেন চাকরিজীবী সারওয়ার, কামাল ও শান্ত। চট্টগ্রামের আরমান শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে আছেন। তিনি এসেছেন বান্ধবী জাহানকে নিয়ে। প্রথমবার মেলায় আসার অনুভূতি জানাতে গিয়ে আরমান বলেন, ‘এত বাংলাদেশি লোকজন দেখে খুব ভালো লাগছে’।
বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন করতে গিয়ে টিএসসি এলাকায় যে ন্যক্কারজনক নারী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছিল, তার প্রতিবাদও ছিল এই মেলায়। লন্ডনভিত্তিক নারী সংগঠন ‘নারী দিগন্ত’ তাদের স্টলে ওই ন্যক্কারজনক ঘটনায় প্রতিবাদী মানুষের সাক্ষর সংগ্রহ করেন। সাক্ষরকারী পুরুষদের হাতের কবজিতে তারা ‘ভাই ফোঁটা’ লাগিয়ে দেন। আর নারীদের কপালে পরিয়ে দেন টিপ।
ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ছিল বাঙালি যুবকদের শ্বেতাঙ্গ বধূরা। তবে উৎসবপ্রেমী এসব মানুষদের চরম আপত্তি ছিল সংগীত আয়োজন নিয়ে। মেলার পোস্টারে বেবি নাজনীনের ছবি দেখা গেলেও মঞ্চে তিনি ছিলেন না। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন দর্শক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় আয়োজন কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কোনো বড় শিল্পীকে আনা হয় না। প্রতিবারই মেলার পোস্টারে শিল্পী সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয় বলে তাঁদের অভিযোগ। তবে মেলার মঞ্চে দিনব্যাপী ছিল স্থানীয় বাংলা সংগীতের মূর্ছনা। নিয়মিত বিরতি দিয়ে পরিবেশিত হয় নৃত্য ও ফ্যাশন শো। স্থানীয় বাংলা সংগীত শিল্পীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পী আশিক ও লিজা দর্শকদের মাতিয়ে তোলেন।
লন্ডনে এবার বৈশাখী মেলার ছিল ১৬ তম আয়োজন। বাংলা নববর্ষে যুক্তরাজ্যে শীত-বৃষ্টির বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মেলার আয়োজন সম্ভব হয় না। তাই এক মাস পিছিয়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশিদের এই বৈশাখী মেলা যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক উৎসব।