২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় গ্রেনেড হামলায় নিহত যুবলীগ নেতা লিটনের মা-বাবা ভাল নেই। এখন কাজকর্ম করতে পারেন না লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সি। লিটন মুন্সির মা আছিয়া বেগম অপারেশনের রোগী। প্রতি মাসে তার ওষুধ বাবদ খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। সরকারী ৩ হাজার টাকা মাসিক ভাতায় না চলে সংসার না চলে চিকিৎসার খরচ। একে তো পুত্রশোকে কাতর বৃদ্ধ মা-বাবা। তারপরে রয়েছে অভাব অনটন। দীর্ঘ ১৬ বছরেও তাদের চোখের জল শুকায়নি। মামলার রায় আজও কার্যকর না হওয়ায় লিটনের পরিবারের মতো হতাহত অন্যান্য পরিবারেও রয়েছে ক্ষোভ। তারা এখনও দিন গুনছে কবে মামলার রায় কার্যকর হবে।
যেখানেই আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিল, সেখানেই ছিল লিটন মুন্সির অবস্থান। সে ছিল যুবলীগের নিবেদিত কর্মী। আর তার টানেই লিটন সেদিন সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা গিয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সি নির্মমভাবে নিহত হয়। নিহত লিটন মুন্সির পরিবারে শোকের ছায়া এখনও কাটেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় লিটনের স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের পথ সুগম হলেও ভাল নেই তার মা-বাবা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সির বাড়ি গেলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও লিটনের মা আছিয়া বেগম, বাবা আইয়ুব আলী মুন্সি, বোন ইসমতআরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাবা (লিটন মুন্সি) বলেছিল, মা তোমার পেটের পাথর অপারেশন করে আনব। মাত্র ১০ দিন অপেক্ষা কর। নয় দিনের মাথায় বাবা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে এলো।’ লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সি বলেন, ‘আমার ছেলের তো কোন দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কিভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন ?’ তিনি এই গ্রেনেড হামলা মামলার রায় কার্যকর করার দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ বছর পূর্বে নিহত লিটন মুন্সির স্ত্রী মাফিয়া বেগমকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে আরও ৫ লাখ টাকা ও ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট বাড়ি দিয়েছেন মেয়ে মিথিলাকে। এছাড়াও মিথিলার ভরণ-পোষণ ও লেখাপড়ার খরচ বাবদ প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেন। মিথিলা এবার মাদারীপুর সরকারী ডনোভান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।
গ্রেনেড হামলায় অন্যদের মধ্যে নিহত সুফিয়া বেগমের বাড়ি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামে। ওই দিন মহিলা নেত্রীদের সঙ্গে প্রথম সারিতেই ছিলেন সুফিয়া বেগম। চঞ্চলা ও উদ্যোমী সুফিয়া সপরিবারে ঢাকায় থাকতেন। তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
নিহত লিটন মুন্সির একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যখন আমার বাবা মারা যান তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। বাবা কি জিনিস তা বুঝতে পারিনি। বাবার আদর পাওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়েছি। হামলার ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাই। আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি। লেখাপড়া শেষে আমি যেন একটা সরকারী চাকরি পেতে পারি তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ দাবি জানাই।